ধর্মীয় নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের হামলায় আইনজীবী হত্যা নিয়ে প্রতিবেদন করেছে লন্ডনভিত্তিক বার্তাসংস্থা রয়টার্স। তবে এ ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমটি পুলিশের কারও বক্তব্য নেয়নি বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।
সিএমপি জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কোনো ধরনের কথা না বলেই রয়টার্স প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যে পুলিশ কর্মকর্তার নাম প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে, তার সঙ্গে রয়টার্সের প্রতিবেদক যোগাযোগ করেননি। অথচ তার নাম ব্যবহার করে বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে।
বুধবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়েছে, ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালি থানার মামলা নং- ৫২, তারিখ- ৩১/১০/২০২৪ এর এজাহারনামীয় ১নং আসামি সনাতন জাগরণ মঞ্চের নেতা চন্দন কুমার ধর প্রকাশ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তার ও জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণ ও তার আশপাশের উদ্ভূত পরিস্থিতির ওপর বিদেশি সংবাদমাধ্যম রয়টার্সে ২৭ নভেম্বর ২০২৪ খ্রি. বেলা ১২:২৭ পিএম (জিএমটি+৬) সময়ে প্রকাশিত “One Killed in Bangladesh as Hindu protesters clash with police” শিরোনামে একটি রিপোর্ট চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের নজরে এসেছে’।
‘রিপোর্টটি পরবর্তীতে ভয়েস অব আমেরিকাসহ আরও অনেক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। রিপোর্টটিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার লিয়াকত আলী খানকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছে, “A Muslim lawyer defending Das was killed amid protests outside the court [in Chittagong],” said police officer Liaquat Ali’.
সোমবার রাতে ঢাকার বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হন চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারী। পরে তাকে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার সকালে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তোলা হয় আদালতে। এসময় তার মুক্তির দাবিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আইনজীবীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান চিন্ময়ের অনুসারীরা।
সংঘর্ষের এক পর্যায়ে চিন্ময় দাসের অনুসারীরা আদালত ভবনের নিচ থেকে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে তুলে নিয়ে রঙ্গম কনভেনশন হলের পেছনে নিয়ে যায়। সেখানে রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবীকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে ফেলে চলে যায়।
এই হত্যার ভিডিও ফুটেজ সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, একদল উগ্রবাদী বিক্ষোভকারীর হামলায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছেন আইনজীবী আলিফ। তার ঘাড় এবং মাথা থেকে ক্রমাগত রক্ত ঝরছে। কিন্তু এরপরও তার ওপর নির্মম হামলা চালিয়ে যায় চিন্ময় অনুসারীরা।
অথচ রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর হয়ে আইনি লড়াই করছিলেন মুসলিম আইনজীবী সাইফুল ইসলাম।
এ ব্যাপারে সিএমপির বার্তায় বলা হয়, ‘রয়টার্স বা কোনো সাংবাদিক এই বিষয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) লিয়াকত আলী খানের সঙ্গে কথা বলেননি। ঘটনার সময়ে তিনি আদালত প্রাঙ্গণসহ আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কাজে দায়িত্বরত ছিলেন।’
‘লিয়াকত নামে চট্টগ্রামে চারজন কনস্টেবল আছে। তারাও কাউকে কোনো বক্তব্য দেননি। কারো বক্তব্য গ্রহণ না করেই নিজেদের মনগড়া বক্তব্যকে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য বলে চালিয়ে দেওয়া সাংবাদিকতার নীতিমালা পরিপন্থী। ভবিষ্যতে রয়টার্সসহ সকল গণমাধ্যম এই ধরনের সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
এর আগে ভারতীয় গণমাধ্যমও নিহত আলিফকে চিন্ময়ের আইনজীবী হিসেবে পরিচয় করিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়।
প্রেস উইং জানায়, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের পেশকৃত ওকালতনামা থেকে দেখা যায় যে, তার আইনজীবীর নাম অ্যাডভোকেট শুভাশীষ শর্মা। এ ক্ষেত্রে সবাইকে যেকোনো প্রকার উসকানিমূলক মিথ্যা প্রতিবেদন প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানায় প্রেস উইং।
:: সূত্র- ঢাকা টাইমস২৪::