ডেক্স রিপোর্ট::-মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা করছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। পরিবহন বিভাগের যুগ্ম সচিব আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের কমিটি ইতোমধ্যে তৈরি করেছে ‘মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালা-২০২৩’ এর খসড়া।
এতে বলা হয়েছে, রাজধানীতে মোটরসাইকেল ৩০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চালানো যাবে না। ঈদ ও উৎসবের সময় মহাসড়কে চলাচল করতে পারবে না মোটরসাইকেল।
রাজধানীতে মোটরসাইকেলের গতি ৩০ কিলোমিটার নির্ধারিত হলে, অন্য উচ্চগতির গাড়ির সঙ্গে একই লেনে চললে দুর্ঘটনা ঝুঁকি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে। গতিসীমা কীভাবে কার্যকর করা হবে- এ প্রশ্নে যুগ্ম সচিব আনিসুর রহমান বলেন, পুলিশের কাছে গতি নির্ধারণের যন্ত্র থাকবে। গতিসীমা লঙ্ঘনের শাস্তি সড়ক পরিবহন আইনে নির্ধারণ করা আছে।
তিনি বলেন, খসড়া নীতিমালায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ নয়, গতি কমানোর দিকে জোর দেয়া হয়েছে। মোটরসাইকেলে বয়স্ক ও শিশুকে যাত্রী না করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিএসটিআই অনুমোদিত উন্নতমানের হেলমেটসহ অন্যান্য নিরাপত্তা সরঞ্জাম চালককে পরার কথা বলা হয়েছে। তবে বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। খসড়া চূড়ান্ত করতে অংশীজনের সঙ্গে সভা হবে। এরপর মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর তা কার্যকর হবে। সড়ক পরিবহন আইনে এবং বিধিমালায় গাড়ির গতি নির্ধারণ করা নেই।
সড়ক পরিবহন বিধিমালার ১২৬ ধারায় বলা হয়েছে, সড়কভেদে সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গতি নির্ধারণ করবে। স্থানীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃপক্ষও গতি নির্ধারণ করতে পারে। মহাসড়কে সর্বোচ্চ নির্ধারিত গতি ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। রাজধানীর ক্ষেত্রে সড়কভেদে তা ৩০ থেকে ৬০ কিলোমিটার। আনিসুর রহমান জানান, সড়ক ও যানবাহনভেদে গতি নির্ধারণের কাজ চলছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি, রোড সেফটি ফাউন্ডেশনসহ বেসরকারি সংস্থাগুলো সড়ক দুর্ঘটনা যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করছে, সে অনুযায়ী দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির প্রায় ৪০ শতাংশের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংশ্নিষ্টতা রয়েছে। সারাদেশে নিবন্ধিত ৫৬ লাখ ২৮ হাজার যানবাহনের মধ্যে ৪০ লাখ ৩৯ হাজার মোটরসাইকেল। গত ১১ বছরে সারাদেশে চারগুণ হয়েছে মোটরসাইকেলের সংখ্যা। ২০২২ সালে নতুন ৫ লাখ ৬ হাজার ৯১২টি মোটরসাইকেল নিবন্ধিত হয়েছে। তবে রাজধানীতে মোটরসাইকেল বাড়ার হার আরো বেশি। ঢাকায় ১১ বছরে পাঁচগুণ হয়েছে এই দ্বিচক্রযানের সংখ্যা। ঢাকায় নিবন্ধিত ১৯ লাখ ৬৬ হাজার যানবাহনের ১০ লাখ ২৩ হাজারই মোটরসাইকেল।
দুর্ঘটনা রোধে গত জুনে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ) মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধের প্রস্তাব করেছিলো। প্রস্তাবটি সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের সভায় উঠলেও সরকারের অনুমোদন পায়নি। সড়ক পরিবহন বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, মোটরসাইকেল উভয় সংকট তৈরি করেছে। বিদেশি নামী-দামী কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে কারখানা তৈরি করে মোটরসাইকেল উৎপাদন করছে।
বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে সরকার তাদের কর ছাড় দিয়েছে। এতে মোটরসাইকেলের দাম কমেছে। সড়কে মোটরসাইকেল বাড়ছে। মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ করলে, বিদেশি বিনিয়োগের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। মোটরসাইকেল উৎপাদকরা সড়ক পরিবহন সচিবের সঙ্গে একাধিকবার দেখা করে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।