তেরো হাজারের বেশি কিলোমিটার দূরের এক দেশে নির্বাচন। আর তা নিয়ে আরো অনেক দেশের মতো আগ্রহের কমতি নেই বাংলাদেশের অনেকেরও। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাট—যে দলের প্রার্থীই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হোক না কেন, তাতে বাংলাদেশের লাভ-ক্ষতির হিসাবটা কী?
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পরিবর্তনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে। তার মতে, ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের ভিন্ন ভিন্ন নীতির কারণে প্রবাসী ও অভিবাসনপ্রত্যাশীরা সুবিধা বা অসুবিধায় পড়তে পারেন।
হুমায়ুন কবির একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতিমালার ক্ষেত্রে আমাদের কিছুটা সুবিধা-অসুবিধা হয়ই। যেমন—জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) যতটা শক্তিশালী থাকবে, আমাদের স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে ততটা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এ বিষয়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলের প্রার্থীর ভিন্ন মতামত আছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এগুলোতে বিশ্বাস করেন না। তিনি এককভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্যান্য দেশের সম্পর্কটাকেই প্রধান ভিত্তি বলে মনে করেন। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী করার পক্ষে।’
আর সেখানে থাকা প্রবাসী ও নতুন করে যাঁরা দেশটিতে স্থায়ীভাবে থাকার জন্য যেতে চান, তাদের জন্যই বা সহায়ক হবেন কে? ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি জো বাইডেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘অভিবাসীদের ক্ষেত্রে একটা বড় পরিবর্তন আশা করা যায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অনেকগুলো অভিবাসন প্রক্রিয়া স্থগিত করে রেখেছেন। যদি তিনি ক্ষমতায় আসেন আবার, তাহলে তিনি পরবর্তী সময়ে সেগুলো বাতিলও করে দিতে পারেন। এ বিবেচনায় বাংলাদেশি যারা এখনো নিয়মিতকরণের আওতায় ঢুকতে পারেননি, তারা সেখানে খানিকটা উৎকণ্ঠায় আছেন। অন্যদিকে যদি বাইডেন প্রেসিডেন্ট হয়ে আসেন, তিনি কিন্তু বলেছেন, যারা অনিবন্ধিত আছেন, তাদের তিনি নিয়মিতকরণ করে দেবেন। বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলে বাংলাদেশি ভাইবোনেরা হয়তো কিছুটা সুবিধা পেতে পারেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম হাড্ডাহাড্ডি এই লড়াইয়ে যেই বিজয়ী হোক না কেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে আরো গতি আনতে সচেষ্ট থাকতেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিদের প্রতি পরামর্শ হুমায়ুন কবিরের।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এখনো জয়-পরাজয়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও গন্তব্যের খুব কাছেই পৌঁছে গেছেন ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী জো বাইডেন। ফল ঘোষণার বাকি থাকা পাঁচ অঙ্গরাজ্যের চারটিতেই ট্রাম্প এগিয়ে থাকলেও নেভাদায় এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন। ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার মধ্যে নেভাদা, পেনসিলভানিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া ও আলাস্কার ভোটের ফলাফল এখনো মেলেনি। এগুলোতে এখনো ভোট গণনা চলছে। এর মধ্যে পেনসিলভানিয়ায় ২০টি, নর্থ ক্যারোলাইনায় ১৫টি, জর্জিয়ায় ১৬টি, আলাস্কায় তিনটি ও নেভাদায় ছয়টি মহামূল্যবান ইলেকটোরাল ভোট আছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজের প্রজেকশন অনুযায়ী, নেভাদায় ৮৪ শতাংশ ভোট গণনা হয়েছে, যার ৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন বাইডেন। আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট। এখানে জয় পেলে আকাঙ্ক্ষিত ছয়টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটই হতে পারে বাইডেনের হোয়াইট হাউসে যাওয়ার চাবিকাঠি।
অন্যদিকে আবারও প্রেসিডেন্ট হতে হলে ট্রাম্পকে নেভাদাসহ পাঁচটি অঙ্গরাজ্যের সব (৬০টি) ইলেকটোরাল ভোটই পেতে হবে।