শহীদুল আলম শকু (৪০)। দৃষ্টি নেই দুটি চোখে। তবে উপজেলা সদরে লেবু বিক্রি করে সংসার চালান। যা আয় হয় তাতে খেয়ে না খেয়ে কোনভাবে চলে সংসার। অভাবের সংসারে রয়েছে একটি তিন বছরের কন্যা সন্তান। জন্মের তিন মাসের মাথায় ধরা পড়ে থ্যালাসেমিয়া রোগ। প্রতি মাসে রক্ত দিতে হয় মেয়েকে। উপার্জন করার মত সে ছাড়া আর কেউ নেই। ত্রিশ বছর ধরে লেবু বিক্রি করছেন। গতকাল সোমবার তাঁর সাথে কথা হলে কান্না করতে করতে এসব কথা বলেন তিনি।
জন্মগত দৃষ্টিহীন না হলেও জটিল রোগের কারণে তাঁর দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যায়। তবে তিনি দমে যাননি দৃষ্টির কাছে। জীবন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। ভিক্ষা নয় বরং লেবু বিক্রি করে সংসার চালান শকু। বোয়ালখালী উপজেলা সদরে রাস্তার পাশে বসে লেবু বিক্রি করেন তিনি।
উপজেলা থেকে ৩ কিলোমিটার পূর্বে আকুবদন্ডী বৈলতলী মিনা গাজী বাড়ির আবু ছৈয়দের পুত্র শহীদুল আলম শকু। জন্মের পর ভালোই ছিল শকুর চোখ। ছয় বছর বয়সে হঠাৎ চোখে লুতি উঠে আক্রান্ত হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে ডাক্তারের পরামর্শে অপারেশন করা হয় শকুর চোখে। কিন্তু সে অপারেশনে তাঁর দু'টি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। অর্থের অভাবে আর উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি পরিবারের। তবে অন্যের বোঝা না হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি। চেষ্টা যেন বৃথা যায়নি তাঁর। এখন এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছে একজন আদর্শ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। অনেকেই তাঁকে দেখে অবাক হন। লেবু বেচাকেনার টাকা গণনার জন্যও তাঁর কারও সাহায্য লাগে না। যেকোনো টাকা হাতে নিয়ে নিজেই বলে দিতে পারেন কত টাকা। শুরুতে তিনি বিভিন্ন স্কুলের সামনে চনাবুট ও বাদাম বিক্রি করে কোন রকম সংসার চালাতেন। পরে তিনি লেবু ব্যবসায় আগ্রহী হন।
স্ত্রী ও এক কন্যা সন্তান নিয়ে শকুর পরিবার। অভাবের সংসারে গত তিন বছর আগে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। নাম রাখেন তৈয়্যবা সুলতানা। বর্তমানে এই কন্যাটির বয়স তিন বছর তিন মাস। জন্মের তিন মাসের মাথায় কন্যাটির থ্যালাসেমিয়া রোগ ধরা পড়ে। প্রতি মাসে রক্ত দিতে হয়। অভাবের সংসারে সরকারিভাবে প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া যেন আর কিছুই মিলে না।
শকুর সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমার মত অনেক অন্ধ ভিক্ষা করে জীবন-যাপন করে। তবে ''নবীজির শিক্ষা করোনা ভিক্ষা মেহনত কর সবে'' এই বাক্যটি আমার মনে চরমভাবে নাড়া দেয়। অন্ধ হতে পারি তবে হাত, পা তো আর অচল নয়। তাই ভাবলাম কিছু একটা ব্যবসা করে কোন রকম সংসার চালাতে পারলে হলো। সামান্য পুঁজিতে ত্রিশ বছর আগে লেবুর ব্যবসা শুরু করি। সেই থেকে এখনো চলমান এই ব্যবসা। তবে সরকারিভাবে কোন আর্থিক সহায়তা পেলে আমার ব্যবসা, পরিবার ও আমার কন্যা সন্তানের চিকিৎসা করাতে পারবো বলে আশা করি।
বোয়ালখালী পৌরসভার মেয়র জহুরুল ইসলাম জহুর বলেন, জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো দৃষ্টি। যা ছাড়া কোন কিছু করা অসম্ভব। আর সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন শকু। দৃষ্টিহীন হওয়া সত্ত্বেও তিনি ব্যবসা করে যাচ্ছেন। অনেকের সামর্থ থাকার পরেও মানুষ ভিক্ষা করে, তারা যেন শকুকে দেখে কিছু শিক্ষা অর্জন করতে পারে। পৌরসভা থেকে তাঁকে সার্বিক সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।
ই-মেইল:
[email protected],
[email protected]
৯/ডি মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০।
Copyright © 2025 আজকের সংবাদ. All rights reserved.