যারা দেশ ও দেশের মানুষের নিরাপত্তায় দিনরাত ছুটে চলেছেন, যাদের রাতজাগা পরিশ্রমে মানুষ নিরাপদে থাকে, সেই পুলিশই যেন নিজভ‚মে আতঙ্কে থাকেন সর্বদা। পুলিশের আধুনিকায়নের নানান উদ্যোগের ফলে আপাতদৃষ্টিতে সব পাওয়া একটি বাহিনী মনে হলেও এখনো আলোর নিচে অন্ধকারে থাকার মতো অবস্থায় আছে পুলিশেরই মাঠ পর্যায়ের কর্তা-সদস্যরা।
বাহিনীর উন্নয়নে এবং বাহিনীতে কাজ করা পুলিশ সদস্যদের উন্নয়নে নানাবিধ উদ্যোগের মধ্যেও চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া থানাধীন চাক্তাই পুলিশ ফাঁড়িটি যেন আলোর নিচে অন্ধকারের জ্বলন্ত উদাহরণ। এখানকার পুলিশ সদস্যদের ভোগান্তি যেন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এ ফাঁড়িতে কর্মরত আছেন ২১ জন পুলিশ সদস্য। আর জরাজীর্ণ ভবনের ছোট একটি কক্ষে পাশাপাশি চৌকি বিছিয়ে গাদাগাদি করে থাকেন ১৫ জন পুলিশ। যেখানে নেই পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা। ছোট এই ভবনটিতে দিনের বেলায়ও থাকে ঘুটঘুটে অন্ধকার।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে প্রায়ই চর্মরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এখানকার পুলিশ সদস্যরা। পাশে পুলিশ কর্মকর্তার ঘিঞ্জি পাকা কক্ষে বাঁশে ঝুলানো বৈদ্যুতিক সিলিং ফ্যানটি বলে দেয় ভবনটির করুণ অবস্থা। এখানে সাময়িকভাবে পানির ব্যবস্থা করা গেলেও সংকীর্ণ টয়লেটটি যেন এক টুকরো নরক! ভবনটিতে কোনোমতে বিদ্যুতের সরবরাহ থাকলেও নড়বড়ে ভাঙা সুইচের সঙ্গে খোলা বৈদ্যুতিক তার বাড়িয়েছে সমমৃত্যু ঝুঁকি।
তাছাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে একটু জোরে বাতাস এলেই দেয়ালের পলেস্তারা থেকে বালু খসে পড়ে। ভবনের ছাদে এবং দেয়ালের বড় বড় গর্ত জানান দিচ্ছে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। পরিবার-পরিজন রেখে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আসা পুলিশ সদস্যরাই এখানে আছেন অনেকটা নিরাপত্তাহীনতায়।
সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, ভবনটির নিচের তলায় মুদির দোকান আর উপরের তলায় কোনোভাবে থাকেন পুলিশ সদস্যরা। পুরো ফাঁড়িতে একটি অফিসকক্ষ; অপরটি থাকার স্থান। যাতে কোনোভাবে বিশ্রাম নেন পুলিশ সদস্যরা। আবার জরুরি কোনো ডাক পড়লেই দৌড়াতে হয় তাদের। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার জন্য বিশ্রাম নিতে আসলেও সেখানে মেলে না কোনো শান্তি। বিছানায় শুতে গেলে ছাদের দিকে তাকালে একপ্রকার ভয় কাজ করে তাদের মনে। কেউ কেউ পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারলেও বাকিরা চিন্তিত থাকেন।
২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর চাক্তাই পুলিশ ফাঁড়ি স্থানান্তরের জন্য নতুন উপযুক্ত স্থান/ বাসা ভাড়ার বিষয়ে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি আদেশ জারি করা হয়েছিল। সেই আদেশে বলা হয়, ‘সিএমপি’র দক্ষিণ বিভাগের বাকলিয়া থানাধীন চাক্তাই পুলিশ ফাঁড়িটি একটি পুরাতন ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিত্যক্ত ভবনের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ গঠিত হওয়ার পর থেকে এই পুরাতন ভবনটিতে উক্ত ফাঁড়ির প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। উক্ত ফাঁড়িতে ব্যারাক, ম্যাস, অস্ত্রাগার ও অফিস কক্ষ রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে ফাঁড়ির ভবনটি ধসে পড়ে প্রাণহানির মত বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। এমতাবস্থায় উক্ত ফাঁড়ি স্থানান্তরের জন্য বাকলিয়া থানাধীন এলাকায় উপযুক্ত স্থান/ভাড়া বাসা নির্বাচন করার আদেশ দেয়া গেল’।
এ ব্যাপারে চাক্তাই পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এসআই) মো. বেলাল উদ্দিন বলেন, একটি কক্ষে থাকেন ১৫ জন। এখানে নেই মালখানা, হাজতখানা, নেই অস্ত্রাগারও, তাই বিছানার পাশে অস্ত্র রেখে ঘুমাতে হয় পুলিশ সদস্যদের। আর যে শৌচাগার রয়েছে তা ব্যবহার অনুপযোগী। যারা নিয়মিত অবস্থান করেন, তারা আমাকে সবসময় বিষয়টি বলেন। আমরাও নতুন বাসা খুঁজছি। শীঘ্রই শিফট করব।
বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুর রহিম পূর্বদেশকে বলেন, আধুনিক পুলিশ ফাঁড়ির কোনো সুযোগ-সুবিধাই নেই ফাঁড়িটিতে। চাক্তাই এলাকায় আমরা সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত উপযুক্ত স্থান খুঁজছি। কিন্তু সেরকম পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা চাক্তাইয়ের ভেতরে বা আশেপাশে বাসা পেলে পুরাতন জরাজীর্ণ ভবনটি ছেড়ে দেব। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে বাকলিয়া থানার কার্যক্রমও কল্পলোক আবাসিকের একটি ভবনে অস্থায়ীভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে। এই অস্থায়ী ভবনে প্রতিমাসে ভাড়া প্রদান করতে হয় ২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। অথচ কল্পলোক আবাসিকে এ ভবনটির ভাড়া হতো সর্বোচ্চ ১ লাখ ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার মত। কিন্তু পুলিশের বিধানমতে থানা কার্যক্রম পরিচালনা করায় ২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা প্রদান করে সিএমপি।।
ই-মেইল:
[email protected],
[email protected]
প্রথম
তলা, হোল্ডিং নং# ১৩৮১ (হাজী মার্কেটের পাশে) খন্দকার বাড়ির মোর,ঢাকা-১২১২,বাংলাদেশ।