চট্টগ্রাম বোয়ালখালীতে শুরু হয়েছে প্রায় দুইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী সূর্যব্রত মেলা। যে মেলা স্থানীয়দের কাছে সূর্যখোলা নামেও পরিচিত। প্রতি বছর হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঘ মাসের শুক্লাপক্ষের শেষ রবিবার সূর্যদেবের পূজার মাধ্যমে শুরু হয় সূর্যব্রত মেলা।প্রাচীনকাল থেকে গ্রামীণ ঐতিহ্যকে লালন করে আসছে জ্যৈষ্ঠপুরা এলাকায় এ সূর্যব্রত মেলাটি। এ বছর তিন দিনব্যাপী এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। রবিবার (০৯ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হওয়া মেলায় মানুষের ভিড়। মঙ্গলবার রাতে এ মেলা শেষ হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজক কমিটি।
উপজেলার জৈষ্ঠ্যপুরা কানুরদিঘীর পাড় সূর্য মন্দির সংলগ্ন মাঠ সাজানো হয়েছে নান্দনিক রূপে।ঐতিহ্যবাহী সূর্যব্রত মেলা উপলক্ষে মাঠ জুড়ে বসেছে নানা ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান। শীতের শেষে বসন্তের আগমনের আগে চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শত শত মানুষের সমাগম হয় এ মেলায়।
মেলায় ঘুরতে আসা স্বপ্না দাশ বলেন, ছোটবেলায় জৈষ্ঠ্যপুড়া সূর্যখোলা (সূর্যব্রত মেলা) যে মেলা আমাদের অনুভূতি ছিল আগের দিন রাত থেকেই এই মেলা উপলক্ষে আমাদের ঘুম আসতো না। কারণ কিভাবে সকালে মেলায় যাব, মেলায় গিয়ে বাদাম, জিলাপি খাবো।
এসময় স্থানীয় বাসিন্দা জয়তু সেন বলেন, এই সূর্য মন্দিরটি আমাদের জৈষ্ঠ্যপুড়া গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মন্দির। আমারা সেই ছোট্ট বেলা থেকেই দেখে আসছি এই মন্দিরকে ঘিরে মেলা। আমার জানা মতে দুই-চার পুরুষ পার হয়ে গেছে এই পূজা হয়। এখন মেলার জৌলুশ হারায় যাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আপন সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে এ মেলায় গৃহস্থালী জিনিসপত্র থেকে শুরু করে গ্রাম বাংলার ঐহিত্যবাহী নানান সামগ্রী পাওয়া যায়। ফুলের ঝাড়ু, পোড়া আলু, বাঁশ-বেতের তৈরি আসবাবপত্র, শীতল পাটি, তাল পাতার হাত পাখা, মাটির তৈরি তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন রকমের জিনিসপত্রের পসরা নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। ছোটদের বিনোদনের জন্য রয়েছে নাগরদোলার ব্যবস্থা। মেলায় বেচা বিক্রি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিক্রেতারা।
অন্যান্য মেলা থেকে এই মেলায় ভিন্নতা রয়েছে।তবে আমাদের অবহেলার কারণে এ মেলার জৌলুশ হারিয়ে যাচ্ছে এমনটা বললেন মেলা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী বসুতোষ দাশ।
মেলা উদযাপন কমিটির সহ সভাপতি শিবাশীষ সেন বলেন, আমার অনেক আগের প্রজন্ম থেকে শুরু করে আমার বা তার পরের প্রজন্মেও একটি আকর্ষণ দেখা যাচ্ছে কিন্তু নতুন প্রজন্মের এই মেলার প্রতি আকর্ষণ কমে যাচ্ছে। আর এইখানকার একটি সব চাইতে ভালো দিক হল এখানে অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মেলাকে ঘিরে একটি আনন্দমূখর পরিবেশ তৈরি করে।
মন্দিরের পূজারী হারাধন চক্রবর্তী বলেন, সূর্যদেবের পূজার মাধ্যমে শুরু হয় সূর্যব্রত মেলা। মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলন, ভাবের ও সংস্কৃতির মিলন ও আদান-প্রাদান। মেলাতে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাই স্বাগত।
উল্লেখ্য ২শ বছর পূর্বে কোনো এক মাঘ মাসের শীতের তীব্রতায় গ্রামের মানুষ যখন জবুথবু হয়ে পড়ে তখনই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আরাধনা করেন সূর্য দেবের। সনাতন ধর্মের নর-নারীরা উপবাস রেখে মনোবাসনা পূর্ণ করতে সূর্যদেবতাকে তুষ্ট করার অভিপ্রায়ে নানা উপাচারে উৎর্সগ করেন। সে সব উপাচার একের পর এক সাজিয়ে রাখায় তা সূর্যখোলা নামেও পরিচিত। সেই থেকে প্রতি বছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের শেষ রবিবার পূজার প্রচলন ঘটে। কালক্রমে তা উৎসবে পরিণত হয়।এর থেকেই সূর্যের ব্রত মেলা।